মুসাফির
[ নো স্পয়লার ]
❝ঢাকা এট্যাক❞ এরপর আরেফিন শুভ’র সেকেন্ড বেস্ট একশন ফিল্ম ছিলো ❝মুসাফির❞। পরিচালক আশিকুর রহমান আশিকের দারুণ এক নির্মাণ ছিলো এই ❝মুসাফির❞। অল্প বাজেটের মধ্যেও যে দারুণ এক ফিল্ম নির্মাণ করা যায়, সেটা আশিকুর রহমান দেখিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তিনি আলাদা করে ধন্যবাদ ডিজার্ভ করেন।
সব চলচিত্রের মতো এই ফিল্মেও পজিটিভ নেগেটিভ দু’টো দিকই ছিলো। তবে পজিটিভ দিক বেশি ছিলো এজন্য রিভিউ দেওয়া।
পজিটিভ দিক :
–––––––––
১. মৌলিক গল্পের দারুণ এক একশন ফিল্ম ছিলো এটি। একশন সিকুয়েন্সগুলো আসলেই দুর্দান্ত ছিলো। হ্যান্ড টু হ্যান্ড ফাইট সিকুয়েন্সগুলো ছিলো দেখার মতো। বিশেষ করে বিদেশী ফিল্মের একশন স্ট্যান্টের মতো কয়েকজন পার্কার ছিলো এই ফিল্মে। বাংলাদেশে পার্কার পাওয়া খুবই দুষ্কর বিষয়। অল্প বাজেটেও যে এমন একশন সিকুয়েন্স দেখতে পাবো সেটা সত্যিই বিস্ময়ের বিষয় ছিলো।
২. আরেফিন শুভ’র অভিনয় মোটামুটি ভালোই রিয়েলিস্টিক ছিলো এই ফিল্মে। বোঝাই যাচ্ছিলো পরিশ্রম করছে। ডায়ালগ ডেলিভারি থেকে শুরু করে ফাইট সিন সবগুলোই বেশ ভালো ছিলো তার। সত্যি বলতে এই ফিল্মে আরেফিন শুভ’র যা অভিনয় ছিলো তার দশভাগের একভাগও যদি ❝
মিশন এক্সট্রিম❞ এ দিতেন উনি, তাহলে হয়তো পাশা অন্যদিকে ঘুরে যেতো কিছুটা হলেও।
৩. পার্শ্বচরিত্রগুলোর অভিনয় ছিলো মোটামুটি। মোটকথা সবাই কমবেশি চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে মূখ্য ভিলেন চরিত্রে সোহেল মন্ডল ছিলো দুর্দান্ত। একদম ন্যাচারাল অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও অফিসার এবং ভিলেন চরিত্রে মিশা সওদাগরের অভিনয় ভালো ছিলো। সচরাচর উনি প্রত্যেকটা ফিল্মে ভিলেন লুক বোঝানোর জন্য মুখ দিয়ে অনেক উদ্ভট শব্দ করেন, যা তিনি এই ফিল্মে করেননি। এজন্য বেশ ভালো লেগেছিলো উনার অভিনয়।
৪. লোকেশন, সেট ডিজাইন, গানের কোরিওগ্রাফি, কালার গ্রেডিং বিগ বাজেটের অন্য আট-দশটা বাংলা ফিল্ম থেকে অনেক সুন্দর ছিলো। বিশেষ করে গানগুলো ছিলো একদম ফার্স্টক্লাস!
নেগেটিভ দিক :
–––––––––
১. ভিএফএক্স ভালো ছিলো না এই ফিল্মের। একটা দৃশ্যে দেখায় আরেফিন শুভ আর ছোটখাটো একটা ভিলেন ট্রেনে উঠে মারামারি করছে(২ নং ছবি)। এই অংশটুকু ভালো লাগেনি। বোঝা যাচ্ছিলো যে ব্যাকগ্রাউন্ডে এগুলো ভিএফএক্স। ঠিকমতো মেলাতে পারেনি। এছাড়াও আরেকটা দৃশ্যে দেখায় আরেফিন শুভ আর নায়িকা ছাদের রেলিং এ বসে কথা বলছেন(৩ নং ছবি)। ব্যাকগ্রাউন্ডের রাতের পরিবেশেও ভিএফএক্সের ব্যাবহার করা হয়েছিলো, যা রিয়েলিস্টিক লাগেনি। ক্লিয়ারলি বোঝা যাচ্ছিলো এগুলো ফেক।
২. নায়িকা মারজান জেনিফার অভিনয় অনেক বিরক্তিকর ছিলো। এই ফিল্মের একটা দৃশ্য (৪ নং ছবি) থাকে এমন যে, আরেফিন শুভ নায়িকাকে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছে। সেখানে নায়িকা তার বোন এবং মা’র সাথে দেখা করে। নায়িকার বোন তখন বলেন যে, তাদের বাবা মারা গিয়েছে। এই কথা শুনে নায়িকা চিল্লাপাল্লা আর ওভারএক্টিং করা শুরু করে দেয়!
এসব দৃশ্যে ডায়ালগ ডেলিভারির পরে দর্শক ইমোশনাল হবে, দৃশ্যপটের সাথে নিজেকে মিলিয়ে আবেগআপ্লুত হবে, কিন্তু আমার এই নায়িকার অভিনয় আর ডায়ালগ ডেলিভারি দেখে বড্ড হাসি পেয়েছিলো। ইমোশনাল একটা সিকুয়েন্সকে উনি হাস্যরসের মঞ্চ বানিয়ে তুলেছিলেন। উনার চিল্লাপাল্লা আর অতিরঞ্জিত ওভারএক্টিং ছিলো দেখার মতো!
এছাড়াও বেশকিছু প্লটেও তিনি ওভারএক্টিং করেছেন। আর ডায়ালগ ডেলিভারির ব্যাপারে কি বলবো! মনে হচ্ছিলো মুখস্থ বুলি আওড়াচ্ছেন তিনি!
৩. সবথেকে বাজে যে অংশটা ছিলো সেটা হচ্ছে ❝টাইগার রবি❞। মূলত উনি একজন ভিলেন, কিন্তু অভিনয়ের ❝অ❞ টাও তিনি পারেন না। আমার কি মনে হয় জানেন, উনাকে টাকা দিয়ে ফিল্মে আনা হয়নি। বরংচ উনিই টাকা দিয়ে এসব ফিল্মকে নষ্ট করছেন। এই লোক ❝মুসাফির❞ ছাড়াও ❝বিজলী, সুপার হিরো❞ ‘র মতো ভালো ভালো ফিল্মে যা-তা অভিনয় করে ফিল্মগুলোকে নষ্ট করেছেন। এই ফিল্মেও উনার অতিরঞ্জিত ওভারএক্টিংয়ের ব্যাপক আধিপত্য ছিলো। যা ফিল্ম দেখার মুড প্রায়ই নষ্ট করে দিয়েছিলো।
__________________________________________
পজিটিভ নেগেটিভ ফিল্মেরই অংশ। আমাদের উচিৎ নেগেটিভ সাইডগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এসব আর দেখতে না হয়!
সর্বপরি ❝মুসাফির❞ ছিলো বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এক ফিল্ম। যেসময় বাংলা চলচিত্র প্রায় ধ্বংসের পথে, ঠিক সেসময় আশিকুর রহমান আশিক অল্প বাজেটের মধ্যে দারুণ এক ফিল্ম উপহার দিয়েছিলেন। প্রেক্ষাগৃহেও বেশকিছুদিন চলেছিলো এই ফিল্ম।
ফিল্মের একদম শেষে ❝মুসাফির ২❞ লেখা দেখিয়েছিলো। ফিল্ম রিলিজের প্রায় ৬ বছর হয়ে গেলো, এখনো ❝মুসাফির ২❞ এর দেখা মিললো না। আশিকুর রহমানের উচিৎ অতি শীঘ্রই ❝মুসাফির ২❞ নিয়ে কাজ করা। ভালো মানের ফিল্ম দেখবার জন্য আমরা উৎসুক দর্শক মুখিয়ে আছি।
রেটিং : ০৭/১০