২০০৭ সাল।
Mrs Chatterjee Vs Norway
কলকাতা নিবাসী ভূ-পদার্থবিদ অনুরূপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিয়ে হয় সাগরিকা চক্রবর্তীর। বিয়ের পরেই ওঁরা অনুরূপের নতুন চাকরির সূত্রে চলে যান নরওয়েতে।
Table of Contents
সেখানে ২০০৮ সালে সাগরিকা জন্ম দেন ওঁর প্রথম সন্তান অভিজ্ঞানকে, যার অটিজম ধরা পড়ে। ২০১০ এ ওঁর দ্বিতীয় সন্তান ঐশ্বর্যর জন্ম দেওয়ার সময় সাগরিকা অভিজ্ঞানকে একটি পারিবারিক কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি করেন।

২০১১ সালে অনুরূপ এবং সাগরিকা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের সন্তানদের ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই বছরই মে মাসে Norwegian Child Welfare Services (CWS) মা এবং শিশুদের মধ্যে ‘অবহেলা’ এবং ‘আবেগগত সংযোগ বিচ্ছিন্ন’ অভিযোগ তুলে অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে বাজেয়াপ্ত করে।
Mrs Chatterjee Vs Norway Movie Review
CWS শিশুদের যত্ন সহকারে পালন করবে এবং তাদের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত তারা বাবা-মায়ের কাছে যেতে পারবে না, এই শর্তে দম্পতিকে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে বাচ্চা দুটোকে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি।
কী কী অভিযোগ ছিল সাগরিকা ও অনুরূপের বিরুদ্ধে?
১) সাগরিকা নিজের হাতে সন্তানকে খাওয়াতেন। সেটা নাকি জোর করে খাওয়ানোর সমান।
২) সন্তানেরা বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় কেন ঘুমোত?
৩) সাগরিকা মাত্র একদিন মেয়েকে হাল্কা চড় মেরেছিলেন। এটা সেখানে অপরাধ।
৪) বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলোর জায়গা ছিল না।
নরওয়েতে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে খুব কঠোর নিয়ম রয়েছে। সেই দেশে বসবাসকারী প্রত্যেক পরিবার সেই নিয়ম মানতে বাধ্য। না হলেই কর্তৃপক্ষ কঠিন পদক্ষেপ নেয়।
“এজেন্সির মহিলা অফিসার প্রায়ই আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে আসতেন। আমি রান্না বা আমার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় উনি এসে হাজির হতেন। উনি শুধু বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আমি ওঁদের ভাষা খুব একটা বুঝতাম না। তাই বেশি কথা বলতে পারতাম না।
কিন্তু ওঁরা আমাকে কখনও ইঙ্গিত করেননি যে, কোনও সমস্যা আছে, ওঁরা যা লিখছেন তা নিয়ে কোনও সতর্কবার্তাও দেননি। আমার সন্তানদের কেড়ে নেওয়ার মতো কাজ ওঁরা করতে পারেন, তা আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। যখন এটা ঘটেছিল তখন আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।” বলেছেন সাগরিকা।
১১ মে, ২০১১, সাগরিকা ওঁর ছেলেকে কিন্ডারগার্ডেনে রেখে বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে উনি একটি বৈঠকে বসেন একজন সমাজকর্মী এবং অন্য দুজনের সঙ্গে। দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একজন পরিচর্যাকর্মী ঐশ্বর্যকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে নিয়ে যান।
কিছুক্ষণ পরে পরিচর্যা কর্মীরা অভিভাবকদের ডেকে জানান যে, দুই শিশুই CWS এর অধীনে রয়েছে। দুই দিন ধরে অনুরূপ ও সাগরিকাকে তাদের সন্তানদের দেখতে নিষেধ করা হয়েছিল।
দুই দিন পরে যখন দম্পতি সন্তানদের দেখতে থানায় যায়, তখন আবেগপ্রবণ সাগরিকা নিজের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি। আর সেটা দম্পতির জন্য পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছিল।
সেই বছরই নভেম্বরে, সামাজিক বিষয়ল স্থানীয় কাউন্টি কমিটি CWS এর পক্ষে রায় দেয়, যেটি অনড় ছিল যে সাগরিকা ও অনুরূপ যেন তাদের সন্তানদের ফিরে না পায়।
অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছিল এবং তাদের নিজেদের পালিত যত্নে রাখে। বছরে মাত্র তিনবার দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয় এবং প্রত্যেকটি এক ঘন্টার জন্য।
Degree Importance for students
এপ্রিল, ২০১২, ভারত্ত সরকারের হস্তক্ষেপের পর নরওয়ে আদালত শিশুদের ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু শর্ত ছিল যে তারা তাদের কাকার কাছে থাকবে। ইতিমধ্যে সাগরিকা ও অনুরূপের বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল।
এরপরেও সাগরিকার লড়াই চলতে থাকে। তার শ্বশুরবাড়িত তরফ থেকে তাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অবশেষে নভেম্বর, ২০১২ তে সাগরিকাকে সাইকোলজিক্যালি ফিট ঘোষণা করা হয় এবং সে নিজের সন্তানদের ফিরে পায়।
আমি যত সহজ ভাষায় ঘটনাটা লিখলাম, সাগরিকার লড়াইটা ঠিক তার উল্টো ছিল। একজন মা নিজের সন্তানদের জন্য কতটা লড়াই করতে পারে, তার এক উদাহরণ সাগরিকা।
১৭ মার্চ, ২০২৩ রিলিজ হয়ে গেছে রাণী মুখার্জী এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত সিনেমা “Mrs. Chatterjee vs Norway”, যা সাগরিকার লড়াইইয়ের সত্যি ঘটনার ওপর তৈরী করা হয়েছে। সিনেমাটা দেখলে হয়তো আমি বা তোমরা আরও কিছুটা ভাল করে তার কঠিন লড়াইয়ের পেছনের কষ্ট অনুভব করতে পারব।
পারলে সবাই দেখো।
ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টি পড়ার জন্য। এটি লিখেছেন আমাদের মুভি লাভারজ অফ বাংলাদেশ গ্রুপের এক ভাই।