এই সিনেমার বাজেট যদি ১০০ কোটি ❝টাকা❞ হয়, তাহলে আমিও অরিজিনাল টম ক্রুজ!
যে কাহিনী ফিল্মের এই কাহিনীর হাজারটা ফিল্ম লোকেদের দেখা! জাস্ট একটার উদাহরণ দিচ্ছি, কোলকাতার জিৎ এর ❝Panther❞ দেখেন, সেই বিভিন্ন দেশে শ্যুটিং আর দেশভক্তি রিলেটেড একটা ফিল্ম!
আনান্তা সাহেবের ফিল্মের থেকে ঐ ফিল্মটা ১০০ গুণ ভালো! কি এমন এক্সট্রা ইফেক্ট আনান্তা সাহেব তার ফিল্মে দিয়েছেন যে তাই বলে বাজেট একদম লাগামহীনভাবে ❝১০০ কোটি টাকা❞ হয়ে গেলো?
 |
(image credit: Wikipedia) |
এই সিনেমার বাজেট ভূলেও ১০০ কোটি ❝টাকা❞ না। আনান্তা জলিল মার্কেট ধরে রাখার জন্য আর একটা হাইপ ক্রিয়েট করার জন্য ❝১০০ কোটি টাকা, ১০০ কোটি টাকা❞ বাজেট বলে হাইপ তোলার চেষ্টা করেছিলেন সেই শুরু থেকে!
যেহেতু একজন যৌথ প্রযোজনার ফিল্ম, খুব হলে আনান্তা জলিল বাংলাদেশ থেকে যে খরচটা হয়েছে সেটা হয়তো দিয়েছে। যা হিসেব করলে ❝১০০ কোটি টাকা❞ তো দূর, সর্বোচ্চ টেনেটুনে মোট ৩/৪ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে! মার্কেট ধরে রাখার জন্য বাজেট ❝১০০ কোটি টাকা❞ বলে বিগত ২ বছর যাবৎ বেশ গালগপ্প করেছেন তিনি!
আনান্তা জলিলের ইচ্ছে ছিলো বরাবরের মতোই খবরের কাগজের শিরোনাম হয়ে থেকে যাবেন। এজন্য সেই ২০২০ সাল থেকে ❝১০০ কোটি বাজেট, ১০০ কোটি বাজেট❞ বলে বেশ চাপাবাজি করেছেন।
আরো বিভিন্নরকম বিতর্কিত কথাবার্তার জন্য বারংবার খবরের কাগজের হেডলাইন হয়েছেন উনি কিন্তু এই ❝১০০ কোটি টাকা❞ বলার চাপাবাজিটা মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে! পাবলিক এখন আগের মতো অতটাও বোকা না যে যখন যা বোঝাবেন সবাই তাই ধরে বসে থাকবে!
এখন কি আর সেই দিন আছে যে ❝নিঃস্বার্থ ভালোবাসা❞ ফিল্মে আনান্তা সাহেবের বুক থেকে লাভ সাইন সম্বলিত হার্ট (❤️) বের করা দেখে পাবলিক কেঁদে দিবে, কিংবা সেই হার্টের গায়ে আনান্তা সাহেবের ড্যাশিং লুক দেখে সবাই ❝Wow!Man এটা আমাদের সিনেমা❞ বলে চিল্লাবে বা হার্টের গায়ে বুলেট লেগে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেই হার্ট ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে সিনেমাহলেই টিস্যুবক্স শেষ করবে?
অডিয়েন্স সম্পর্কে উনার চিন্তাভাবনা সেই ৮ বছর আগেই পড়ে রয়েছে এটাই মূল সমস্যা!
আমার মনে হয় না আনান্তা সাহেব কখনো বাংলা চলচিত্রের উন্নতি চেয়েছে। সে এবং তার স্ত্রী শুধুমাত্র নিজেদের অর্থায়নে সিনেমার নায়ক নায়িকা হতে চেয়েছে! কেননা আদোও যদি আনান্তা জলিল বাংলা চলচিত্রের উন্নতি চাইতো তাহলে সে নায়ক না হয়ে, প্রযোজক হতে পারতো!
বাংলাদেশে এমন অনেক পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী আছে যারা শুধুমাত্র বাজেট এনশিওর না হওয়ার জন্য ভালো কাজ করতে পারছেন না! আনান্তা জলিল সত্যিই বাংলা চলচিত্রের ভালো চাইলে সে নিজে তাদের ফিল্মের প্রযোজক হয়ে সেই ফিল্মগুলোকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করতে পারতো!
কিন্তু না! তাকে তার নিজের টাকায় নায়ক হতে হবে এবং বাংলা চলচিত্রের ১২ টা বাজাতে হবে!
আমি নিজে এই সিনেমাটা নিয়ে এক্সাইটেড ছিলাম। এই সিনেমার ৩য় এবং সর্বশেষ ট্রেইলার নিয়ে একটা রিভিউও দিয়েছিলাম যে এই ট্রেইলারটি মোটামুটি ভালোই হয়েছে, মানা যায়! কিন্তু ভাই সিনেমাটা আসলেই অত্যাধিক রকমের ফালতু ছিলো!
আনান্তা সাহেবের ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কি না জানি না কিন্তু আমার ৩৫০ টাকা পুরোপুরি আগুনে পুড়ে গিয়েছে! কারণ পানিতে পড়লেও পানি থেকে তুলে শুকিয়ে আবার ব্যাবহার করতে পারতাম!
_______________দিন – The Day ______________
________________নো স্পয়লার________________
পজিটিভ দিক :
_____________
১. সাউন্ড ডিজাইনিং ছিলো মারাত্মক! হাত থেকে যদি একটা আলপিনও পড়ে যায় তাও স্পষ্ট শোনা যাবে! একদম প্রথম ট্রেইলারে যেমন সাউন্ড ডিজাইনিং দেখা গিয়েছিলো অনেকটাই ওইরকম।
২. সিনেম্যাটোগ্রাফি মোটামুটি ভালোই ছিলো।
৩. বিভিন্ন দেশে শ্যুট করা হয়েছে, সে হিসেবে লোকেশনগুলো ছিলো মনোমুগ্ধকর।
নেগেটিভ দিক :
_____________
১. আনান্তা বর্ষার অভিনয় বরাবরের মতোই বাজে হয়েছে!
২. পুরো ফিল্মে সংলাপ যদি থাকে ১০০ টা, তার ৫০ টা-ই বোঝা যাবে না!
৩. ডাবিংগুলো খুবই বাজে ছিলো! মনে হচ্ছিলো হাতে একটা বই নিয়ে রিডিং পড়ছে আর সেই অডিও জাস্ট ভিডিও ক্লিপের উপর জুড়ে দিয়েছে!
৪. প্রায় ৩ ঘন্টা রানটাইম ফিল্মের, তার উপর অসংলগ্ন সংলাপই অনেক বেশি যার অর্ধেক আবার কিছুই বোঝার কোনো উপায় নেই!
৫. কোনো নতুনত্ব নেই। এধরনের হাজারটা ফিল্ম বলিউড আর সাউথ ইন্ডিয়ানরা প্রতিবছর বানাচ্ছে! কোনো স্পেসিফিক টুইস্ট কিচ্ছু নেই!
__________________________________________
বাংলা চলচিত্রকে তো সাপোর্ট করতেই চাই কিন্তু এধরনের ফিল্মকে সাপোর্ট করা কতটুকই বা যুক্তিযুক্ত হবে! এই ফিল্মটা আসলেই ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের হতো যদি শাকিব খান কিংবা আরেফিন শুভ কিংবা এবিএম সুমন এদেরকে সুযোগ দেওয়া হতো! কিন্তু না আমাকে তো নিজ অর্থায়নে নায়ক হয়ে বাংলা চলচিত্রকে নাস্তানাবুদ করতেই হবে!
By the way, এই সিনেমার কাহিনী ফালতু হলেও সিনেমাহলে ভালোই চলছে। প্রায় সব শো-ই নাকি হাউজফুল যাচ্ছে! কালকের শো-তে দেখলাম মোটামুটি মানুষ হয়েছিলো। হল একদম ফাঁকাও ছিলো না আবার ভর্তিও ছিলো না!
__________________________________________
এবার মূল পয়েন্টে আসি, আপনার আমার ভালো না লাগলেও এই সিনেমা ব্লকবাস্টার হবেই। কারণ আনান্তা সাহেব আগাগোড়া একজন ব্যাবসায়িক লোক। বাংলাদেশের খরচটা যদি ১ কোটিও হয় সেই টাকা উনি হল, ওটিটি এসব জায়গা থেকে ঠিকই উঠিয়ে নিবেন। বাকি টাকাটা ইরানের মার্কেটিংয়ের উপর নির্ভর করে।
যেহেতু ৮০+ দেশে এই সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেহেতু মোটামুটি ব্লকবাস্টার হবে এই সিনেমা, কাহিনী যতই দুর্বল হোক না কেন!
IMDB রেটিং : ৩.৭ / ১০
ব্যাক্তিগত রেটিং : ০২ / ১০
ALLJOBS P1 UN2NROLNFC 16222